বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০৮:১০ পূর্বাহ্ন

১৩ কোটি টাকা পাচারের প্রমাণ পেয়েছে সিআইডি

১৩ কোটি টাকা পাচারের প্রমাণ পেয়েছে সিআইডি

স্বদেশ ডেস্ক:

টেকনাফ স্থলবন্দরে শুল্ক স্টেশনের চুক্তিভিত্তিক সাবেক কম্পিউটার অপারেটর নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১৩ কোটি টাকা পাচারের প্রমাণ পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ ছাড়া তার মোহাম্মদপুরে চারটি বাড়ি, একটি মার্কেট, ঢাকা ও কক্সবাজারে জমি ও স্থাবর সম্পদের সন্ধানও পেয়েছে সংস্থাটি। সিআইডি বলছে, মাদক ব্যবসার মাধ্যমে অর্জিত এসব অর্থ তিনটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি বৈধ করার চেষ্টা করেছিলেন।

‘নুরুলের ইয়াবা ম্যাজিক’ শিরোনামে গত ৩১ জানুয়ারি দৈনিক আমাদের সময়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এতে ইয়াবার টাকায় নুরুলের বাড়ি, মার্কেট ও বিপুল সম্পদের তথ্য উঠে আসে।

নুরুলের অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের দায়িত্বে আছেন সিআইডির পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, মাদক কারবারের টাকা নুরুল ইসলাম ও স্ত্রী রাজিয়া ইসলাম কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে আয়কর দিয়ে বৈধ করে বিদেশে পাচার করেছেন। এ অভিযোগে গত শুক্রবার রাজধানীর আদাবর থানায় তাদের বিরুদ্ধে অর্থপাচার আইনে মামলা হয়েছে।

জানা গেছে, আদাবরের ঢাকা উদ্যানের বুড়িগঙ্গার পাড় ঘেঁষে ‘ডি’ ব্লকের ৪ নম্বর রোডের ৬৬ নম্বর বাড়িটির মালিক নুরুল ইসলাম। কোনো চাকরি কিংবা দৃশ্যমান বৈধ ব্যবসা না থাকলেও তিনি তিনতলা এই বাড়ির দেড়শ গজ দক্ষিণে মার্কেট গড়ে তুলেছেন। মার্কেটের ৫০০ গজ দূরত্বে চন্দ্রিমা মডেল টাউনের ‘বি’ ব্লকের ৭ নম্বর রোডে রয়েছে দোতলা বাড়ি। নবীনগর হাউজিংয়ের ৮ নম্বর রোডের ৭০/৮০ নম্বর বাড়ির মালিকও তিনি। এ ছাড়া মোহাম্মদপুরের (৩০ নম্বর ওয়ার্ড) ‘ডি’ ব্লকের ৩ নম্বর রোডের বাড়িতে তিনি বর্তমানে পরিবারসহ থাকেন।

নুরুলের পাশাপাশি তার স্ত্রী রাজিয়া ইসলামের নামে বিপুল জমি ও প্লট রয়েছে। এর মধ্যে মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্রপুর মৌজায় তিন কাঠা জমি, একই এলাকায় প্রায় সাত শতাংশ ও সাভারের আমিনবাজারের বরদেশি মৌজায় ৫৩ শতাংশ জমি রয়েছে। এ ছাড়া কক্সবাজারের টেকনাফে দুটি এলাকায় তার নামে ২৪ শতাংশ জমি কেনেন নুরুল ইসলাম।

বাড়ির ভাড়াটিয়া ও স্থানীয়রা বলছেন, এক যুগ আগেও নুন আনতে পান্তা ফুরানো নুরুল ইসলামের এখন ৩০ থেকে ৩২টি বাড়ি ও প্লট রয়েছে।

২০০৯ সালের ৩০ জুন নুরুল ইসলাম প্রথম আয়কর বিবরণী দাখিল করেন। তাতে স্থাবর-অস্থাবর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল সাড়ে ৮ লাখ টাকা। ১১ বছরের মাথায় ২০২০ সালের আয়কর বিবরণীতে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯ কোটি ৯৪ লাখে। কোনো চাকরি কিংবা প্রদর্শনযোগ্য ব্যবসা না থাকলেও তার স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ সাড়ে ৩ কোটি টাকা। তিনটি কোম্পানি মাধ্যমে এক দশকে তিনি এসব সম্পদ অর্জন করেছেন বলে দাবি করেছেন।

গত শুক্রবার আদাবর থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, নুরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী রাজিয়া ইসলাম মাদক ব্যবসায় জড়িত। তাদের বৈধ ব্যবসার সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, মেসার্স আল নাহিন এন্টারপ্রাইজ, মিফতাহুল এন্টারপ্রাইজ ও আপকা এন্টারপ্রাইজ নামের তিনটি প্রতিষ্ঠান আছে নুরুল ইসলামের। তিনটিই ভুয়া। এসব কাগুজে কোম্পানির কোনো অস্তিত্ব নেই। বিভিন্ন ব্যাংকে হিসাব খোলার সময় ‘কেওয়াইসি’ ফরমের সঙ্গে সংযুক্ত এসব কাগুজে প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয়। মিয়ানমার থেকে ইয়াবা এনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাইকারি বিক্রি করাই নুরুলের মূল ব্যবসা।

ভোলা সদরের ধনিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম কানাইনগর এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম। তিনি ২০০১ সালে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে শুল্ক স্টেশনে চুক্তিভিত্তিক কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি পান। তখন তার মাসিক বেতন ছিল ৩ হাজার ৯০০ টাকা। তিনি বন্দরে পণ্য খালাস ও পরিবহনের সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আনার একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। বন্দরে নিজের লোক নিয়োগের পর ২০০৯ সালে সেই চাকরি ছেড়ে দেন। এরপর আস্থাভাজন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্য আমদানির নামে ইয়াবা আনার পাশাপাশি নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অপরাধে বিপুল টাকা আয় করেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877